বাড়ি ফেরার স্রোত

বাংলাদেশ

দিগন্তের আলো ডেস্ক :
গতকাল মাওয়া ঘাটে ফেরির চিত্র-নিজস্ব ছবি আগের দিনের ভিড় দেখে ভোর থেকেই মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু থেমে থাকেনি মানুষের স্রোত। ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে সকাল থেকেই। যাত্রীর চাপে এক পর্যায়ে ঘাট থেকে ফেরি ছাড়তে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। ফেরিতে হাজারো যাত্রী গাদাগাদি করে পদ্মা পাড়ি দিয়েছেন। ফেরিঘাটে দিনভর দেখা গেছে মানুষের ভিড়। মানুষের এই ঈদযাত্রায় স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না কোথাও।

ওদিকে সরকারি নির্দেশ না থাকলেও কোনো কোনো রুটে চলছে যাত্রীবাহী বাস। কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বাড়ির পথে যাত্রা করছেন মানুষ।
কেউ কেউ ভাড়া করছেন প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস। অনেকেই যাচ্ছেন পণ্যবাহী গাড়িতে। এমনকি নদী পার হতে অনেকেই ভিড় করছেন পণ্যবাহী, জরুরি যানবাহন পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ফেরিতে। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, এই নিষেধাজ্ঞার কবলে হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যাদের নিজেদের গাড়ি নেই। বিমানে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। প্রাইভেট গাড়িতে করে ঢাকা ছাড়ছেন যারা তারা তেমন কোনো বাধার শিকার হচ্ছেন না। এ বিষয়ে ময়মনসিংহগামী যাত্রী আমেনা আফরোজ জানান, গত রাতে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ফ্লাইওভার এলাকা থেকে একটি বাসে উঠেছেন। ভাড়া তিনগুণ। এটা এক ধরনের হয়রানি। তিনি আরো বলেন, যাদের গাড়ি আছে, গাড়িতে যাচ্ছে। লকডাউন কেউ মানছে না। হয়রানি আর দুর্ভোগ হচ্ছে আমাদের মতো গরিবদের।

জানা গেছে, সায়েদাবাদ, মহাখালী, গাবতলীসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে দূরপাল্লার যানবাহন। টিকিট দেয়া হচ্ছে অনেকটা গোপনে। পরে কাউন্টার থেকে মিনিবাসযোগে নিয়ে যাওয়া হয় বাসে। বাস রাখা হয় কাউন্টার থেকে অনেক দূরে। এভাবেই চলছে শ্যামলী, সেন্টমার্টিন, সুগন্ধা পরিবহনসহ বিভিন্ন বাস। চট্টগ্রামগামী যাত্রী আলী নূর জানান, গত রাতে ঢাকা থেকে বাসটি ছাড়ে। মেঘনা, সোনারগাঁ এলাকায় পুলিশের চেকপোস্টে বাসটি থামানো হয়েছিলো। পুলিশের সঙ্গে চালকের সহযোগী নিচে নেমে কয়েক মিনিট কথা বলার পরই বাসটি ছাড়তে আর বাধা দেয়া হয়নি।

প্রকাশ্যে সেভাবে গণপরিবহন না থাকলেও ঘরমুখো মানুষ থেমে নেই। গন্তব্যে যাচ্ছেন প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে। এক্ষেত্রে ভাড়া গুনতে হচ্ছে বেশি। কুমিল্লা যেতে সাধারণ সময়ের দুই শ’ টাকার ভাড়া গুনতে হচ্ছে ছয় শ’ টাকা। ফেনী যেতে তিন শ’ টাকার ভাড়া দিতে হচ্ছে এক হাজার দুই শ’ টাকা। নোয়াখালী যেতে সাত শ’ টাকার ভাড়া গতকাল ছিল দুই হাজার টাকা। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের ভাড়াও গুনতে হচ্ছে তিনগুণ বেশি।

সিলেটগামী যুবায়ের জানান, দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় মাইক্রোবাসে বাড়ি যাচ্ছেন তিনি। মাইক্রোবাসটি যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। এজন্য জনপ্রতি এক হাজার দুই শ’ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, গত ঈদে বাড়ি যাওয়া হয়নি করোনার কারণে। এবার অনেকেই যাচ্ছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কষ্ট হচ্ছে। তবু যেতে হচ্ছে।

গতকাল সকালে দেখা গেছে, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে ডেকে ডেকে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুরে যাত্রী উঠানো হচ্ছে মাইক্রোবাসে। ফেনী যাচ্ছে এক হাজার পাঁচ শ’ টাকায়। মাদারীপুরের বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে গতকাল ভোররাত থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচলও বন্ধ। গতকাল ভোর থেকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ। তবে লাশ, রোগীবাহী এম্বুলেন্স, জরুরি সেবামূলক ও পণ্যবাহী পরিবহন পারাপারে ফেরি চলাচল করবে বলে জানায় বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ।

তারপর থেমে নেই মানুষের যাতায়াত। উপচে পড়া ভিড় যাত্রীদের। জরুরি পরিবহন নিয়ে চলাচলকারী ফেরিঘাটে ভিড়লেই অপেক্ষমাণ যাত্রীরা লাফালাফি করে ফেরিতে উঠছেন। তবে দিনভর লাশ, রোগীবাহী এম্বুলেন্স, জরুরি সেবামূলক ও পণ্যবাহী পরিবহন পারাপারে ফেরি চলাচল করবে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ। গতকাল দুপুরে মানুষের চাপে ফেরিতে পণ্যবাহী গাড়ি পর্যন্ত উঠানো সম্ভব হয়নি। এমনকি ঘরমুখো মানুষের কারণে এম্বুলেন্স ফেরিতে উঠাতে বেগ পেতে হয়েছে। গতকাল দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে এ রুটের ফেরিগুলোতে। ঘরমুখো এসব মানুষ গাদাগাদা করে ফেরিতে উঠেন। বেশির ভাগ মানুষের মুখে ছিল না মাস্ক। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই ভিড় করে মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *