নয়ন এমপির মাইরের কোনো আওয়াজ হয় না, ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়

রায়পুর

দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-

‘নয়ন এমপির মাইরের কোনো আওয়াজ হয় না, ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়’
কাজী জামশেদ কবীর বাকী বিল্লাহ
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণায় উস্কানিমূলক ও অশালীন বাক্য ব্যবহার করে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপির ক্ষমতার জোর দেখিয়েও বক্তব্য দিচ্ছেন অনেকে। এর মধ্যে ‘নয়ন ভাইয়ের মাইরের কোনো আওয়াজ হয় না, ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়, নয়ন এমপি ইশারা দিলেই তো ধুমা হয়ে যায়’আওয়ামী লীগ নেতা কাজী জামশেদ কবীর বাকী বিল্লাহর এমন বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।

এদিকে রোববার (১৯ মে) সকালে রায়পুর উপজেলা শহরের একটি হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করে এমপি নয়নের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আনেন চেয়ারম্যানপ্রার্থী আলতাফ হোসেন হাওলাদার (মোটরসাইকেল প্রতীক)। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মামুনুর রশিদ (আনারস) এমপি নয়নের ভগ্নিপতি। ফলে তাকে জেতাতে এমপি নয়ন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মোটরসাইকেল প্রতীকের কর্মীদের টিআর ও কাবিখার প্রজেক্ট দিয়ে ‘ম্যানেজ’ করছেন বলেও অভিযোগ আনা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

তবে অভিযোগের ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমি কোনো কথা বলব না। যে যাই বলুক তা নিয়ে নির্বাচনের পর কথা বলব। যেহেতু আমি নির্বাচনী প্রচারণায় নেই সেহেতু কোনো বক্তব্য দেওয়ারও সুযোগ নেই।

জানা গেছে, নির্বাচনে আলতাফ হোসেন হাওলাদারের পক্ষে দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু ছালেহ মো. মিন্টু ফরায়েজি কাজ করছেন। মিন্টু ফরায়েজি তার একটি বক্তব্যে এমপি নয়ন ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ আলী খোকনকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন। এর পরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এখন প্রতিটি নির্বাচনী প্রচারণায় মোহাম্মদ আলী খোকন ও কাজী জামশেদ কবীর বাকী বিল্লাহ মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থীর বিপক্ষে বিভিন্ন ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন।

১৭ মে আনারস প্রতীকের নির্বাচনের সমন্বয়কারী আওয়ামী লীগ নেতা কাজী জামশেদ কবীর বাকী বিল্লাহর দেওয়া একটি বক্তব্য উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ওই বক্তব্যটি তিনি তার ফেসবুকে লাইভে প্রচার করেছেন। এতে নয়ন এমপির ক্ষমতার জোর দেখিয়ে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনিতো (আলতাফ) এমপি নয়ন ভাইকে চেনেন না। নয়ন ভাইয়ের বিচক্ষণতার কাছে সবাই আত্মসমর্পণ করেছেন। নয়ন ভাইয়ের মাইরের কোনো আওয়াজ হয় না। ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়। কাটবেও না, ছিঁড়বেও না, সেলাইও লাগবে না। শুধু যন্ত্রণা হবে। ফুলা ও বেদনাদায়ক জখম হবে। থেঁতলাইয়া যাবে, থেঁতলাইয়া।’

এর আগে আরেকটি বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এমপি নয়ন প্রভাব খাটান নাই। উনি চুপ করে খেলা দেখছেন। উনার খেলা শুরু হবে ২১ তারিখের পর। উনি সংসদ সদস্য হয়ে আপনাকে (আলতাফ) হুমকি দেবে কেন? আপনাকে হুমকি দিলে নয়ন এমপির ইজ্জত থাকে? নয়ন এমপি ইশারা দিলেই তো ধুমা হয়ে যায়। কাজেই খেলা হবে ২১ তারিখের পর। সবাই প্রস্তুত থাকেন।’

এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচারণামূলক বক্তব্যে আলতাফ হোসেন হাওলাদারকে উদ্দেশ্য করে বাকী বিল্লাহ বলেন, ‘আলতাফ আহাম্মক, অপদার্থ, বেআক্কেল। তিনি নিজেকে জনপ্রিয় দাবি করে। পাগলের সুখ মনে মনে, রাতে উঠে তারা গুনে। আবার তিনি এমপি নয়ন, মোহাম্মদ আলী খোকন, মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাটকে তোয়াক্কা করে না। রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে তিনি অবজ্ঞা করে, তিনি আহাম্মক। উপজেলা আওয়ামী লীগ, জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ক্ষমতাকে সে চ্যালেঞ্জ করে। ২১ তারিখের পর তুমি তার জবাব পাবে।’

আলতাফের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক ইসমাইল হোসেন খোকন বলেন, নির্বাচন নিয়ে প্রশাসন নিরপেক্ষ রয়েছে। কিন্তু এমপি নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন হুমকি দিচ্ছেন। প্রশাসন যা দেখাচ্ছে তা আজ কিংবা কাল রাতে বন্ধ হয়ে যাবে। উনার (এমপি নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন) কথার বাইরে কোনো প্রশাসন থাকবে না। তিনি তার বাহিনী দিয়ে ভোট নিয়ে যাবে এবং ভোট সুষ্ঠু হতে দেবে না। আমাদের নেতাকর্মীদের রাতের অন্ধকারে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে টিআর, কাবিখার প্রজেক্ট দিচ্ছে। এ ছাড়া এমপি বলছেন, তার কথা না শুনলে মৃত্যুবরণ করতে হবে এবং দেশ ছাড়তে হবে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা কাজী জামশেদ কবীর বাকী বিল্লাহ বলেন, মোটরসাইকেল প্রতীকের লোকজন আচরণবিধি লঙ্ঘন শুরু করেছেন। মিন্টু ফরায়েজী তার বক্তব্যে খোকন ভাইকে নিয়ে অশ্লীল বাক্য ব্যবহার করেন। এতে আমাদের নেতাকর্মীরা যেন ঝিমিয়ে না যায় সেজন্য মনোবল বাড়াতে আমরা বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিচ্ছি। এটা রাজনৈতিক কৌশল।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রিয়াংকা দত্ত বলেন, নির্বাচনে এমপি নয়নের প্রভাব বিস্তার নিয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। মোটরসাইকেলের কর্মীদেরকে হুমকি বা অশ্লীল ভাষা ব্যবহার নিয়েও কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে আচরণবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, মোহাম্মদ আলী খোকন যেখানেরই ভোটার হন উপজেলা নির্বাচনে প্রচারণা চালাতে কোনো সমস্যা নেই। আমরা যতগুলো অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছি।

প্রসঙ্গত, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় ২১ মে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সুত্র ঢাকা পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *