নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে লক্ষ্মীপুরে ১২১ প্রাথমিক স্কুলে পরীক্ষা ফি আদায়

অপরাদ রায়পুর

দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক পরীক্ষার ফি আদায় করা হয়েছে। উপজেলার ১২১ বিদ্যালয়ে শতভাগ আদায় শেষ হলে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৫ লাখ টাকারও ওপরে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ‘শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের কাছ থেকে কোনো ফি আদায় করা যাবে না’ বলা হলেও এ ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ বিদ্যালয়েই ইতোমধ্যে ফি আদায় শেষ হয়েছে।

ফি আদায়ের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর এটি ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকরা। বুধবার ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ফি নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করতে বলেন। কেউ এলে যেন তারা বিষয়টি স্বীকার করে শিক্ষকদের বেইজ্জতি না করেন সে জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য বৃহস্পতিবার বিকালে জরুরিভাবে প্রধান শিক্ষকদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে ৪টার সময় এ বৈঠক হওয়ার কথা।

বৃহস্পতিবার সারা দেশের মতোই এ উপজেলা থেকে ২২ হাজার ৭৬৩ পরীক্ষার্থী এ মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।

বিদ্যালয়গুলোতে প্রাক-প্রাথমিক শাখা, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে শিক্ষার্থীপ্রতি ৫০ টাকা এবং তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ১০০ টাকা করে পরীক্ষা ফি আদায় করা হয়। কোনো রশিদ ছাড়া মৌখিকভাবে এ ফি নেওয়া হয়। অধিকাংশ বিদ্যালয়েই ইতোমধ্যে শতভাগ ফি আদায় শেষ হয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসসূত্রে জানা যায়, রায়পুর উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও পৌরসভা মিলিয়ে ১২১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়গুলোতে ২২ হাজার ৭৩৬ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এর মধ্যে প্রাকপ্রাথমিক শাখায় ২ হাজার ৭৭৩ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৩ হাজার ৪৮০, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩ হাজার ৭২৪, চতুর্থ শ্রেণিতে ৪ হাজার ১৬৫ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৪ হাজার ৪১৭ শিক্ষার্থী।

এবার পরীক্ষা ফি না নিয়ে বিদ্যালয়ের জন্য আনুষঙ্গিক খাত বা স্লিপ ফান্ড থেকে ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা রয়েছে।

ক্যাম্পেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলাম ও হাওলাদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবহান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নির্দেশনা মেনে এবার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো ফি আদায় করিনি। ফি নেওয়ার বিষয়টি শিক্ষার্থীরা বলে থাকলে সেটি সঠিক নয়।

রায়পুর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোতালেব ও স্টেশন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকার কখন আনুষঙ্গিক খাত বা স্লিপ ফান্ডের টাকা দেয় তা নিশ্চিত নয়। এখন ব্যয় নির্বাহের জন্য আমরা পৌরসভা ক্লাস্টারের শিক্ষকরা বসে খরচ মেটানোর জন্য পরীক্ষা ফি নিয়েছি।

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা টিপু সুলতান বলেন, নিষেধ সত্ত্বেও মূল্যায়ন পরীক্ষার জন্য ফি আদায় দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি জেনেছি। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনসুর আলী চৌধুরী বলেন, ফি আদায়ে মন্ত্রণালয়ের নিষেধ থাকার বিষয়টি বারবার চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। এর পরও ইচ্ছাকৃতভাবে সরকারি আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন দাশ বলেন, নিষেধ থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের কাজ করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে সরকারি নিয়ম না মানা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেন তারা এ ধরনের কাজ করেছেন, এ জন্য সব প্রধান শিক্ষককে বৈঠকের জন্য ডাকা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *