নিজেদের দোষ আর প্রতিপক্ষের ভুল

খেলাধুলা

দিগন্তের আলো ডেস্ক :-
বর্তমান লিগ চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদের অবস্থা তেমন ভালো নয়। গতপরশু রাতে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের আত্মঘাতী গোলের সুবাদে কোনো রকমে সেভিয়ার বিপক্ষে পূর্ণ তিন পয়েন্ট পেলেও, রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদান এখনো চাকরি হারাতে পারেন যেকোনো মুহূর্তে। ওদিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভালো অবস্থানে থাকা বার্সেলোনার লিগের ফর্ম একদম যাচ্ছেতাই। লিগের দুই বড় দলের ক্রমাগত ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে ওদিকে বেশ নীরবে-নিভৃতেই নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করে যাচ্ছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।

বলের দখল নয়, বার্সেলোনাকে হারাতে গতিময় ফুটবলের যে ঘোষণা দিয়েছিলেন কাদিস কোচ, মাঠে তার দেখা মিলল না তেমন। তবে চমক জাগানিয়া জয় ঠিকই তুলে নিয়েছে ১৫ বছর পর লা লিগায় ফেরা দলটি। শক্তি-সামর্থ্যে যোজন যোজন এগিয়ে থাকা প্রতিপক্ষের দুটি ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঘরের মাঠে আসরে প্রথম জয় পেয়েছে কাদিস। প্রতিপক্ষের মাঠে লিগ ম্যাচে ২-১ গোলে হেরেছে রোনাল্ড কোমানের দল। আলভারো হিমেনেসের গোলে শুরুতে কাদিস এগিয়ে যাওয়ার পর প্রতিপক্ষের আত্মঘাতী গোলে সমতায় ফেরে বার্সেলোনা। সফরকারীদের আরেকটি ভুলের সুযোগে জয়সূচক গোলটি করেন আলভারো নেগ্রেদো।

গত ২১ নভেম্বর লিগে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মাঠে হারের পর যেন নিজেদের ফিরে পেয়েছিল বার্সেলোনা। সব প্রতিযোগিতা মিলে টানা তিনটি ম্যাচ জিতেছিল তারা; এই সময়ে গোল করেছিল ১১টি, বিপরীতে হজম করেনি একটিও। তবে লিগে অ্যাওয়ে ম্যাচে বেশ ভুগছিল দলটি। সেই হতাশা এবার আরও বাড়ল। এবারের লিগে ১০ ম্যাচে এই নিয়ে চারটিতে হারল তারা, যার তিনটিই প্রতিপক্ষের মাঠে। আসরে কাদিসের এটি পঞ্চম জয়, আগের চারটি ছিল অ্যাওয়ে ম্যাচে। ১৯৯১ সালের পর প্রথম বার্সেলোনাকে হারাল তারা। ২৯ বছর পর বার্সেলোনার বিপক্ষে জয়ের আনন্দ। গত অক্টোবরে রিয়াল মাদ্রিদকে তাদেরই মাঠে হারানোর পর এবার প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ীদের বিপক্ষে জয়। লিগ টেবিলে মেসিদের টপকে যাওয়ার উচ্ছ্বাস, সব মিলে কাদিসের জয়োল্লাস ছিল বাঁধভাঙা।

এদিকে, স্প্যানিশ লা লিগায় যেন জিততে ভুলে গিয়েছিল রিয়াল! জিদানের শিষ্যরা আগের তিন ম্যাচের দুটিতে হেরেছিল। বাকিটিতে তারা করেছিল ড্র। সেই ছন্দপতন কাটিয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছে দলটি। ম্যাচের শেষভাগে সেভিয়ার আক্রমণের ঝাপটা সামলে প্রতিযোগিতার বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা ফিরেছে জয়ে। প্রতিপক্ষের মাঠে রিয়ালের জয়সূচক গোলটি অবশ্য তাদের কোনো খেলোয়াড়ের কল্যাণে আসেনি। সেভিয়ার গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো দুর্ভাগ্যক্রমে নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে ফেলেন। ডি-বক্সের ভেতরে ফারলান্দ মেন্দির ক্রসে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র কোনোমতে পা ছোঁয়ালেও তা বিপদের কারণ ছিল না। কিন্তু পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসা বোনোর কনুইতে লেগে বল গোললাইন পেরিয়ে যায়।
লা লিগায় রিয়ালের সবশেষ জয়টি এসেছিল গত অক্টোবরে। নিজেদের মাঠে তারা হুয়েস্কাকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল। এরপর ভ্যালেন্সিয়া ও আলাভেসের কাছে হারার মাঝে ভিয়ারিয়ালের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছিল তারা।

তবে, রিয়াল ভ্যালাদোলিদকে ২-০ গোলে হারিয়েছে অ্যাটলেটিকো। গোল দুটি করেছেন ফরাসি উইঙ্গার টমাস লেমার ও স্প্যানিশ মিডফিল্ডার মার্কোস ইয়োরেন্তে। দশ ম্যাচ শেষে এই নিয়ে ২৬ পয়েন্ট পাওয়া হয়ে গেল অ্যাটলেটিকোর। এক মিনিটের জন্যও লিগে শীর্ষস্থান হাতছাড়া করেনি তারা এবার। তা-ও অন্য যেকোনো দলের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলেছে মাদ্রিদের দলটি। হাতে থাকা ম্যাচটা জিতলে দ্বিতীয় স্থানে থাকা রিয়াল সোসিয়েদাদের চেয়ে পাঁচ পয়েন্টে এগিয়ে যাবে দিয়েগো সিমিওনের দল। লিগে এই নিয়ে গত ২৬ ম্যাচ ধরে অপরাজিত আছে দলটি। ২০১৪ সালের পর এই নিয়ে প্রথমবারের মতো টানা সাত ম্যাচ জিতল অ্যাটলেটিকো।

এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে আবারও দলে ফিরেছেন বার্সা থেকে এই মৌসুমেই অ্যাটলেটিকোতে যোগ দেওয়া উরুগুয়ের স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজ। করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট হাতে পাওয়ামাত্রই মাঠে নেমে গেছেন তিনি। গোল করতে না পারলেও দলকে জেতাতে সাহায্য করেছেন সুয়ারেজ।
১২ ম্যাচে পাঁচ জয় ও তিন ড্রয়ে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে উঠেছে কাদিস। ১৪ পয়েন্ট নিয়ে সাত নম্বরে আছে দুই ম্যাচ কম খেলা বার্সেলোনা। ১০ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠেছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। এক ম্যাচ বেশি খেলা রিয়াল সোসিয়েদাদের পয়েন্ট ২৪। রিয়াল মাদ্রিদ ১১ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে আছে তৃতীয় স্থানে। সমান পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে ভিয়ারিয়াল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *