দিগন্তের আলো ডেস্ক :
বিশুদ্ধ পানির সংকট ও তীব্র গরমের কারণে হঠাৎ করেই লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এতে করে হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। গেল এক সপ্তাহে প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী ও শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এসব রোগীদেরকে ফ্লোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও সেবিকাদের। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, গরম বেড়ে যাওয়ায় ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। তবে এ বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সংক্রামণের মধ্যেই লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব। গেল এক সপ্তাহে কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইনডোর ও আউটডোর মিলে চিকিৎসা নিয়েছেন সাত থেকে আটশত ডায়রিয়া রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে কেবল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় পাঁচ শতাধিক রোগী। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু।
সেবিকারা জানালেন, উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে চরমার্টিন, চরকালকিনি, চরবসু, চরকাদিরা, চরলরেঞ্জ, সাহেবের হাট ও চর জগবন্ধু এলাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি। হাসপাতালটিতে শয্যা সংকুলান না হওয়ায় বেডে একাধিক রোগীসহ ফ্লোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন আক্রান্তরা। এতে করে একসঙ্গে এতো রোগীর সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ও সেবিকারা। তবে রোগীর চাপ বেড়ে গেলেও ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান, কর্তব্যরত সেবিকারা।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মীর আমিনুল ইসলাম মঞ্জু জানালেন, জনবল ও শয্যা সংকটের মধ্যেও সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতের চেষ্টা করছেন তারা। গরম বেড়ে যাওয়ায় ও ফুড পয়জোনিংয়ের কারণেই ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে রোগীদের অভিযোগ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় মানসম্মত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। হাসপাতাল থেকে দুই একটি স্যালাইন ছাড়া বাকী সব ঔষধপত্র বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে তাদের। এতে করে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। এছাড়া হাসপাতালটিতে টাকা না দিলে সেবা মিলে না বলেও অভিযোগ করেন কেউ কেউ।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের পাটোয়ারী জানালেন, আক্রান্ত রোগীর তুলনায় অবকাঠামো ও জনবল সংকট থাকায় চিকিৎসা সেবা দিতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। আতঙ্কিত না হয়ে ডায়রিয়া প্রাদুর্ভাব এড়াতে বিশুদ্ধ পানি পানসহ আপাততঃ বাইরের খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিলেন এই চিকিৎসক।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান জানান, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মহামারির মধ্যে এখন আবার ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি জানান, প্রয়োজনে সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সার্বক্ষণিক হাসপাতালে রাখার উদ্যোগ নেয়া হবে।
ডায়রিয়া প্রাদুর্ভাবে আতঙ্কিত না হয়ে বিশুদ্ধ পানি পানসহ পারিবারিক সচেতনতা বাড়ানো উপর গুরুত্বারোপ করেন চিকিৎসকরা।