দিগন্তের আলো ডেস্ক
করোনাভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েই চলেছে পুলিশে। সারা দেশে এ পর্যন্ত ৫৩৭ জন পুলিশ সদস্য এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। তবে এতে জনসেবায় দমে যাবে না পুলিশ সদস্যরা।
পুলিশ সদর দপ্তর এসব তথ্যোর পাশাপাশি আরো জানা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে গত দুদিনে সংক্রমণে রাজধানীতে পুলিশের আরো দুই সদস্যের মৃত্যু হলো। এই নিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন তিন পুলিশ সদস্য। এরপরও বাকিরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই মানুষকে বাঁচাতে সেবা দিয়ে চলেছেন নিরলসভাবে।
নিজেরা সংক্রমিত হওয়ার ভয়, পরিবার পরিজনের পিছুটান উপেক্ষা করে মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়েই তারা মূলত করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে শুরুতে পুলিশের মধ্যে সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাব থাকলেও তা এখন অনেকটাই কমে এসেছে। বিশেষ করে বর্তমান আইজিপি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পুলিশের সুরক্ষা সরঞ্জাম আরো বাড়িয়েছেন বলে জানা গেছে। এখন যা আছে তাই দিয়েই পুলিশ সদস্যরা করোনাযুদ্ধ সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করছে। রাজধানীসহ সারাদেশে বীরদর্পে তারা মানুষের সব ধরনের সেবা দিয়ে চলেছেন।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত সারা দেশে মোট ৫৩৭ জন পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পাশাপাশি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ৩২ জন পুলিশ সদস্য কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) রাখা হয়েছে।
আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২৭২ জন। তাদের মধ্যে ১১ জন নারী সদস্য রয়েছেন। পুরুষ ২৬১ জন।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সারা দেশে ১৬ নারী পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। একজন এসপি, ৪ জন অতিরিক্ত এসপি, ২ জন এএসপি, ১২ জন পুলিশ পরিদর্শক, এসআই থেকে সার্জেন্ট ৫৫ জন, এএসআই ৬৬ জন, ২০ জন নায়েক ও ৩৩১ জন কনস্টেবল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের এ দুঃসময়ে পুলিশের পুরো কাজের ধরণ পাল্টেছে। আইন-শৃংখলা রক্ষায় তেমন ব্যস্ততা না থাকায় করছেন নানা ধরনের সামাজিক কাজ। বিশেষ করে অসহায় মানুষের ত্রাণ সহায়তায় কাজ করছেন। তারা। তবে পুলিশ বাহিনীর মনোবল বাড়াতে চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মিডিয়া সোহেল রানা বলেন, করোনাযুদ্ধে আমাদের তিন সদস্য মারা গেলেও দমে যায়নি আমরা। আমাদের সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে মানুষের পাশে থেকে দায়িত্ব পালন করে চলেছে। মানুষকে সেবা দিয়ে চলেছে।
এদিকে র্যাবসহ আইন শৃঙখলা বাহনীর অন্যান্য সদস্যরাও কম বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে মৃতদের এই অকাল প্রয়াণে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পুলিশের আইজি ডিএমপি কমিশনার গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছেন। এবং তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন। সেই সঙ্গে ভয়কে জয় করে পুলিশের এই বীর সদস্যরা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত নগরবাসীর নিরাপত্তার জন্য কাজ করে গেছেন।
দেশমাতৃকার সেবায় তাঁদের এ আত্মত্যাগে বাংলাদেশ পুলিশ গর্বিত। বিশেষ করে পুলিশ সব সময়ই ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে রয়েছে। তাই পুলিশের সুরক্ষা সরঞ্জাম বাড়িয়ে তাদের মনোবল বাড়াতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ পুলিশের দুজন পরিদর্শকসহ মোট ৪৩ জন সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সর্বশেষ গত দুদিনে আরো ১৭ জন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হলে এই সদস্য সংখ্যা ৪৩ এ দাঁড়ায়।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই তথ্য সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
জায়েদুল আলম জানান, ইতিমধ্যে জেলা পুলিশের দুজন পরিদর্শকসহ ৪৩ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে চারজনকে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে (সিপিএইচ) আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। বাকিরা জেলা পুলিশ লাইনসে ও বাসায় আইসোলেশনে রয়েছেন।