জড়িত কাউকেই ছাড় নয়

অপরাদ আইন আদালত বাংলাদেশ

দিগন্তের আলো ডেস্ক :-
কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত কাউকেই ছাড় দেয় হবে না। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনিবার গভীর রাতে কুষ্টিয়া থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এদিকে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ।

রোববার আওয়ামী লীগ, এর বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এসব কর্মসূচিতে বক্তারা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। এ ধরনের ঘৃণিত কাজ যারা করছে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ভাস্কর্যটি স্থানীয় মাদ্রাসার দুই ছাত্র ভাংচুর করেছে। এ কাজে দুই শিক্ষক তাদের সহায়তা করেছে। জড়িতদের এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুপুরে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি আরও বলেন, ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় উসকানিদাতাদেরও ছাড় দেয়া হবে না।

এদিকে, ভাস্কর্য নিয়ে সমালোচনা করায় মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ দেশের সব ভাস্কর্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। এছাড়া ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শহরতলি জুগিয়া পশ্চিমপাড়া এলাকার মাদ্রাসা ইবনে মাসউদের দুই শিক্ষক ও মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কুষ্টিয়া মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।

গ্রেফতাররা হল- হেফজ বিভাগের ছাত্র ও মিরপুর উপজেলার শিংপুর গ্রামের সমশের মৃধার ছেলে আবু বক্কর ওরফে মিঠুন (১৯), দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামের সামছুল আলমের ছেলে সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ (২০) এবং মাদ্রাসার শিক্ষক ও মিরপুর উপজেলার ধুবইল গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে মো. আল আমীন (২৭) এবং পাবনার দিয়াড়বামুন্দি গ্রামের আজিজুল মণ্ডলের ছেলে মো. ইউসুফ আলী (২৭)।

রোববার বিকাল ৪টার দিকে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনসের সভাকক্ষে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতারদের সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় অতিরিক্ত ডিআইজি নাহিদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এমএম তানভির আহমেদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি জানান, মাদ্রাসা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে দুই ছাত্র হেঁটে এসে ভাস্কর্যটি ভাংচুর করে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়- সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা ও কালো কোট পরা ওই দুই ছাত্র মই বেয়ে ভাস্কর্যের বেদিতে ওঠে। পরে একজনের কাছে থাকা ব্যাগ থেকে হাতুড়ি বের করে ভাস্কর্যে ভাংচুর চালায়।

মিশন শেষ করে তারা একইভাবে হেঁটে মাদ্রাসায় ফিরে বিষয়টি দুই শিক্ষককে (গ্রেফতার হওয়া) জানায়। শিক্ষকরা তাদের মাদ্রাসায় না থেকে বাড়ি যেতে বলে। মাদ্রাসা থেকে হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। হাতুড়িতে সাদা রং লেগেছিল। এ ঘটনায় গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছে পুলিশ।

লিখিত বক্তব্যে ডিআইজি মহিদ উদ্দিন বলেন, রাতের আঁধারে ভাস্কর্য ভাঙার বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। ঘটনার চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং যাচাই-বাছাই করে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে চারজনকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর শনিবার গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আদালতের কাছে রিমান্ড চাইব। এটাকে নিছক কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে আমরা দেখছি না। এ ঘটনার তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশ শতভাগ পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে কাজ করবে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ নিশ্চিত হতে পেরেছে, ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে।

কিভাবে ধর্মীয় বয়ান শুনে এ জাতীয় কাজে উৎসাহিত হয় তার সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করে এর মাত্রা নিরূপণ করা হবে। গ্রেফতার দুই ছাত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি আরও জানান, মাওলানা মামুনুল ও ফয়জুল করিমের বক্তব্য শুনে তারা এ কাজে উদ্বুদ্ধ হয়। মাদ্রাসাশিক্ষক মুহাম্মদ মুসা বলেন, এ ঘটনা অত্যন্ত খারাপ হয়েছে। এটি করা ছাত্রদের ঠিক হয়নি। দেশের আইনে তাদের বিচার হবে। আমাদের কিছু বলার নেই।

এদিকে ভাস্কর্য ভাঙার পর নানা উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে কুষ্টিয়া শহরবাসী আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা করছেন। রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা কমিটি বৈঠকে বিভিন্ন মহল থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ উপস্থিত ছিলেন। ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে দুর্বৃত্তরা স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বের ওপর কামড় দিয়েছে। এর মধ্যেও কয়েকজন তরুণ মাইক্রোবাস নিয়ে কিভাবে সেখানে হাজির হয়ে গুলি চালায় এবং বীরদর্পে চলে যায়। এ ঘটনা আমাদের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।

শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ের বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ী নেতা এসএম কাদরী শাকিল বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতে যেভাবে গুলিবর্ষণ এবং বীরদর্পে তরুণরা চলে গেল তাতে পরিবার-পরিজন উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত হচ্ছি। তিনি বলেন, এ ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তি কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর চালিয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেন, এখনও যারা মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে না, মানে না- তারাই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙেছে। তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই দেশে ধর্মের নাম করে কতিপয় লোক সরলপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে সরকারের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। তাদের খুঁজে বের করে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করবে প্রশাসন।

ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনায় রোববার দুপুরের পর থেকে শহরের বিভিন্ন স্পটে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে জেলা আওয়ামী লীগ। মিছিলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি নেতৃত্ব দেন।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আবেদন : মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আবেদন করা হয়েছে। মামলার অনুমতির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মো. জিশান মাহমুদ। রোববার বিকালে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর তিনি আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের অপর নাম, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান স্বীকৃত জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের শামিল। মাওলানা মামুনুল হক ও জুনায়েদ বাবুনগরীর প্রত্যক্ষ মদদে ভাস্কর্যে আঘাত হেনেছে দুর্বৃত্তরা। যা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অপমানজনক, অগ্রহণযোগ্য এবং তাদের এরূপ ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য এবং কার্যকলাপ বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বিরাগ ও ঘৃণা সৃষ্টির অশুভ অভিপ্রায়ে করা হয়েছে।’

প্রতিবাদ সমাবেশ-বিক্ষোভ : রোববার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মৎস্যজীবী লীগের মিছিল-সমাবেশে শত শত নেতাকর্মী অংশ নেন। নানা কর্মসূচিতে গোটা বঙ্গবন্ধু এভিনিউ উত্তপ্ত হয়ে উঠে।

বেলা ৩টায় যুবলীগ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। এ সময় স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি, সাম্প্রদায়িক, উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। সমাবেশ থেকে যুবলীগ নেতারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য মামুনুর রশীদ, মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন এমপি, রফিকুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবন, নবী নেওয়াজ, এনামুল হক, ড. সাজ্জাদ হায়দার লিটন, মোয়াজ্জেম হোসেন, মৃণাল কান্তি জোয়ার্দার, তাজউদ্দিন আহমেদ, জসিম মাতুব্বর, আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মতিউর রহমান বাদশা, রফিকুল ইসলাম সৈকত জোয়ার্দার, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ, জহির উদ্দিন খসরু, প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, দফতর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন পাভেল, তথ্য ও যোগাযোগ (আইটি) সম্পাদক শামসুল আলম অনিক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মোস্তাফিজ, ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনউদ্দিন রানা, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচএম রেজাউল করিম রেজা প্রমুখ।

আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। মিছিলটি বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আশপাশের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, সহ-সভাপতি গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু, নির্মল চ্যাটার্জি, আবদুল আলিম, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক কেএম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান মোল্লা, দফতর সম্পাদক আজিজুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ প্রমুখ।

ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) কৃষক লীগের বিক্ষোভ মিছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) কৃষক লীগের সভাপতি আবদুস সালাম বাবু, হাজী আবদুর রব খান, হাজী ইব্রাহীম মোল্লা, মনির হোসেন আলী জিন্নাহ, নজরুল ইসলাম বাচ্চু, আবদুল মান্নান, সাইফুল ইসলাম নকিব প্রমুখ।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীরাও। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়ের পাশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিল করে শাহবাগ থানার ২০নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ। এতে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদউদ্দিন আহমেদ রতন। এ সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা ও ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের প্রতিহত করতে রাজপথে থাকার ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও গুলিস্তান এলাকা প্রদক্ষিণ করে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নারীদের গর্জে উঠতে হবে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ কোনো বিষয় মেনে নেয়া হবে না। যারা এ ধরনের ঘৃণিত কাজ করছে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। রোববার মহিলা পরিষদ আয়োজিত ‘নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ বিষয়ে প্রশাসন ও পেশাজীবীদের সঙ্গে এক অনলাইন মতবিনিময়’ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। এতে পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম সভাপতিত্ব করেন।

মৌলবাদী অপশক্তিকে প্রতিহত করার ঘোষণা ছাত্রলীগের : মৌলবাদী অপশক্তিকে শক্ত হাতে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়। ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন, ঢাকা উত্তর মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহিম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. সাইদুর রহমান হৃদয়, ঢাকা (দক্ষিণ) মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মো. জুবায়ের আহমেদসহ বিভিন্ন শাখার নেতাকর্মীরা। সমাবেশের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

সমাবেশে জয় বলেন, ওয়াজ মাহফিলে যারা বঙ্গবন্ধু ও দেশরতœ শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করবে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ছাত্রলীগ অনেক ধৈর্য ধরেছে। কিন্তু এখন শক্ত হাতে সব প্রতিহত করা হবে। ৫৫ হাজার বর্গমাইলের প্রতিটি জায়গায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী রয়েছে। ধর্ম ব্যবসায়ী, ভণ্ড হুজুররা ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে ধর্মের সঙ্গে রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব তৈরি করতে চায়- তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় ঢাবি শিক্ষক সমিতি : বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। রোববার সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিজয়ের মাসে রাতের আঁধারে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অবমাননা নিঃসন্দেহে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির কাজ; যারা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশকে অকার্যকর ও পশ্চাৎপদ এক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। তারা বলেন, দেশের রাজনৈতিক ও ধর্ম ব্যবসায়ী মহল থেকে ভাস্কর্য নিয়ে যে উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়া হচ্ছে, কুষ্টিয়ার ঘটনা তারই বহির্প্রকাশ।

চলচ্চিত্র শিল্পী-কুশলীদের প্রতিবাদ সমাবেশ : বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলীরা। রোববার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) সামনে মানববন্ধন করেন তারা। ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে তারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির আয়োজনে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- চিত্রনায়ক ওমর সানী, চিত্রনায়িকা মৌসুমী, গায়ক এসডি রুবেল, পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, শাহ আলম কিরণ, অপূর্ব রানা, প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু, কামাল কিবরিয়া লিপু, মেহেদি হাসান সিদ্দিকী মনির, কমল পাটেকারসহ অনেকে। চিত্রনায়িকা মৌসুমী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্থপতি। তার ভাস্কর্য ভাঙার দুঃসাহস তারা কোথায় পেল? অবিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ভাস্কর্য ও মূর্তি এক নয়। এ পার্থক্য জানতে হবে, সবাইকে বুঝতে হবে। সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষদের ভুল বোঝানো হচ্ছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’

হাইকোর্টে রিট : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যসহ দেশের সব ভাস্কর্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। রোববার সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট উত্তম লাহিড়ী এ রিট আবেদন করেন। রিটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, অনাচার প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব, ধর্ম সচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিবকে রিট আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে।

রিটের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন নাহিদ সুলতানা যুথী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধুসহ রাষ্ট্রের যত ভাস্কর্য আছে এটা রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র যেন সেটা রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয় তার নির্দেশনা চেয়েছি। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার প্রতীক। আমাদের স্ট্যাচু অব লিবার্টি। বঙ্গবন্ধু কোনো মনুমেন্টে সীমাবদ্ধ না। এটা আমাদের অস্তিত্ব। বাংলাদেশের অস্তিত্ব। বঙ্গবন্ধুর জন্য আজ আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলছি। বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্য আছে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যের যে মনুমেন্টগুলো আছে এগুলো কোনোভাবে কোনো রিলিজিয়াস প্রতীকের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। এটার বিষয়ে নির্দেশনা চেয়েছি।

যুথী আরও বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি ও বায়তুল মোকাররমের খতিব রিলিজিয়াস ভিউ থেকে উনারা বিস্তারিত বলবেন, সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাবেন, এটা কোনোভাবেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে না। এজন্য ওনাদের বিবাদী করেছি। আমরা নিজেরা সবাই ধর্ম পালন করি। আমরা ধর্মের ঊর্ধ্বে নই। আমরা বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে দেখি। সেটার জন্য নির্দেশনা চেয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপরে যেন কোনো আঘাত না আসে সেটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এটা যেন রাষ্ট্র পালন করে।

আইনজীবীদের মানববন্ধন : বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন সুপ্রিমকোর্টের সাধারণ আইনজীবীরা। রোববার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনের চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করেছেন শতাধিক আইনজীবী। এরপর তারা বিক্ষোভ মিছিল করেন। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দীন আহমেদ মেহেদি ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিএম আবদুর রাফেল।

মামুনুল হককে গ্রেফতারের দাবি : ঢাবি প্রতিনিধি জানান, হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে। রোববার ‘অপরাজেয় বাংলা’ নামের একটি সংগঠন আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই দাবি জানানো হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এই বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া, অপরাজেয় বাংলার সদস্য মো. কাওসার, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রাফিউল করিম প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *