চাল চোর বলে নারীকে চড় মারলেন ইউপি চেয়ারম্যান

অপরাদ কমলনগর

দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে এক নারীকে চড়-থাপ্পড় মারার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারাও ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে ক্ষমা চেয়ে পার পান ওই ইউপি চেয়ারম্যান।

শনিবার রাতে দ্বিতীয়বার ইউপি চেয়ারম্যান ভুক্তভোগী ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। এ সময় স্থানীয় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান নিজাম কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

ভুক্তভোগী নারীর বাড়ি হাজিরহাট ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। তবে তাদের মূল বাড়ি রামগতি উপজেলার বড়খেরী ইউনিয়নে। মেঘনা নদীর ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে ২০ বছর আগে তারা হাজিরহাট ইউনিয়নে এসে আশ্রয় নেন।

ওই নারীর অভিযোগ, তার কাছে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত দুটি টোকেন ছিল। ওই টোকেনগুলো নিয়ে তিনি চাল নিতে পরিষদে যান। দুটি টোকেন দেখেই চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে চড়থাপ্পড় মারেন। শত শত লোকজনের সামনে তাকে ‘চাল চোর’ বলে অপমান করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার সকাল থেকে ভিজিএফের আওতায় ইউনিয়নের দুস্থদের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। এর আগে দুস্থদের মাঝে ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিনের স্বাক্ষরিত টোকেন সরবরাহ করা হয়েছে। ওই টোকেন নিয়েই তারা চালের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যান। ওই নারী চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত দুটি টোকেন পেয়েছেন। ওই টোকেনগুলো নিয়েই চাল নিতে যান। অতিরিক্ত টোকেন নিয়ে আসায় চেয়ারম্যান তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে তাকে ধাক্কা দেন এবং লাঞ্ছিত করেন। ওই নারীকে ‘চাল চোর’ বলেও আখ্যায়িত করেন চেয়ারম্যান।

স্থানীয়রা জানায়, একাধিক টোকেন নিয়ে যে কেউ চাল নিতেই পারে। পাড়া প্রতিবেশীদের চাল একজনে গিয়ে পরিষদ থেকে নিয়ে আসে। ওই নারী একাধিক টোকেন নিয়ে চাল নিতে গিয়ে কোনো অন্যায় করেননি।

হাজিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য (মেম্বার) ও উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি শ্রীকৃষ্ণ দাস বলেন, কোনো নারীর গায়ে হাত তোলা অপরাধ। একজন ইউপি চেয়ারম্যান হয়ে তিনি কাজটি ঠিক করেননি। বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। এতে চেয়ারম্যান বাজারে এসে প্রকাশ্যে লোকজনের সামনে ক্ষমা চেয়েছেন।

ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে একজন ১০ কেজি করে চাল পাবে। কিন্তু ওই নারী দুই-তিনটা টোকেন নিয়ে আসছিল। সে চাল নিয়ে যাওয়ার সময় আমি তাকে আটকিয়েছি। বাড়তি চাল রেখে দিতে চেয়েছি। কিন্তু রেখে দিইনি। এনিয়ে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমি তাদের বাড়িতে গিয়ে তাদের সঙ্গে বসে ঘটনা মীমাংসা করে এসেছি। তাকে থাপ্পড়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমার প্রতিপক্ষ ষড়যন্ত্র করছে।

হাজিরহাট ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। চেয়ারম্যান বলেছে- এটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *