চন্দ্রগঞ্জ-মান্দারী সড়ক দখল করে চলছে নীরব চাঁদাবাজি

চন্দ্রগঞ্জ লক্ষ্মীপুর সদর

দিগন্তের আলো ডেস্ক :-
লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ ও মান্দারী বাজারে জনচলাচলের জন্য গুরুত্বপুর্ণ সড়কের দুইপাশের ফুটপাত দখল করে চলছে নীরব চাঁদাবাজি। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বাজারের ইজারাদার তার মনগড়া সিদ্ধান্তে এক শ্রেনির রাজনৈতিক পুঁজিবাদি ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরী করে দিনের পর দিন লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
শুধু তাই নয়, আগের স্টাইল পরিবর্তন করে এখানকার ব্যবসায়ীদের কৌশলে জিম্মী করে ওই চক্রের নির্দিষ্ট কয়েকজন মিলে নীরব চাঁদাবাজি করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে বলে জানান ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। ইজারার নামে বাজারে গণচাঁদাবাজির হাত থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগিরা।
লক্ষ্মীপুর জেলা শহর থেকে ৯ কি.মি. মান্দারী ও ১৭ কিলোমিটার দূরত্বে চন্দ্রগঞ্জ বাজার। চন্দ্রগঞ্জ থানা হওয়ার পর থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে চন্দ্রগঞ্জ ও মান্দারী বাজার । অথচ, চন্দ্রগঞ্জ নজরদারির অভাবে বাজারটিতে জনচলাচলের ফুটপাত ও সড়ক দখল করে দীর্ঘদিন যাবত চলছে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি। যেখানে আগে কেবল ঠেক দিয়ে সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি করতো এখন তারাই কৌশল পাল্টিয়ে বাজার ইজারা নিয়ে নীরবে গণহারে চাঁদাবাজি চালিয়ে আসছে।
স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের চোখে ধুলো দিতেই বাজার ইজারার কৌশলকে কাজে লাগিয়ে হরহামেশাই এমন জঘন্য কর্মকাণ্ড এবং প্রতারণার আশ্রয় নিলেও চাঁদাবাজির সিন্ডিকেটে জড়িত দুর্বৃত্তরা বরাবরেই পর্দার অন্তরালে রয়ে যাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, লাখ লাখ টাকা সেলামী দিয়ে বাজারের ঘরভাড়াটিয়া স্থায়ী দোকানদের সামনে ওই চক্রটি তাদের অনুসারী ও ক্যাডার বাহিনী দিয়ে প্রথমে খালি জায়গা খুঁজেন। এরপর ওই খালি জায়গায় এবং সরকারি চলাচলের রাস্তায় ফুটপাত দখল করে তৈরী করে নির্দিষ্ট পজিশন। পরে ওই পজিশন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের (হকার) কারো কারো কাছে প্রকারভেদে সর্বনিন্ম ২০,৫০ হাজার বা ১ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। এতে সকল ধরনের ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানায় অনেকেই।
চন্দ্রগঞ্জ বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দাবি, নিজেকে শেয়ারদার দাবি করে বাজার ইজারাদারের যোগসাজসে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীন বেতনভূক্ত জনৈক তোফায়েলের মাধ্যমে এবং বাজার ইজারাদারের ভাই মিজান ফুটপাত দখল করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
ভুক্তভোগিরা জানায়, ফুটপাতে হকার বসিয়ে, সড়কে অবৈধ গাড়ি পার্কিং কিংবা ভ্যানগাড়িতে ভাসমান বাজার বসিয়ে প্রতিদিন কিংবা হাটবারে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বিপুল এই অংকের টাকা। আর যারা তাদের ইচ্ছামতো কাজ না করে তাদের উপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন।
এতে স্থায়ী ব্যবসায়ীরাসহ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বলে জানান, ক্রেতা-বিক্রেতা ও জনসাধারণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকে অভিযোগ করেন, কোনো হাটে দোকান না বসালেও পরের হাটে বসলে আগের হাটের খাজনা বাবত টাকা জোর করে আদায় করে নেয় ইজারাদারের লোকজন। সরেজমিনে এমন বর্ণনা দিয়েছেন অনেকেই।
সরেজমিনে আরও জানা গেছে, চন্দ্রগঞ্জ বাজারের অভ্যন্তরীণ সড়কের দু’পাশসহ রাস্তা দখল করে প্রায় দুই শতাধিকের বেশি ভাসমান দোকান বসানো হয়েছে। এসব রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে বসার জন্য হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ আদায় ছাড়াও এককালীন ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। এ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেয় ইজারাদারসহ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। অথচ, মুখোশপরা এসব ভন্ড দুই একজন সরকারি কর্মকর্তার প্রশ্রয়ে থাকার কারণে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে চক্রটি মাঝে মধ্যে প্রশাসনের তৎপরতায় এরা ধরা পড়লেও ছাড়া পেয়ে আবারও একই কর্মকাণ্ড বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে।
এভাবে বিগত বহুবছর ধরে দোর্দণ্ড প্রতাপে চক্রটি বাজারের রাস্তা ও ফুটপাত ভাড়া দেওয়ার নামে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সময়ের তালে দলকে একমাত্র পুঁজি করে এখন তারাই বাজারের একমাত্র নিয়ন্ত্রণ দাতা দাবি করেছেন অনেকের। নিজদলের নেতাকর্মীদের মাঝে পদ-বাণিজ্য, অফিস-বাসাবাড়িতে এক ধরনের দেওয়ানি ফৌজদারী আদালত বসিয়ে শালিস বাণিজ্য, বিভিন্ন অপরাধে আসামি ধরা-ছাড়া, উদ্ধার ও দখল বাণিজ্য, কারো বিরুদ্ধে চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র, হয়রানি কিংবা কাউকে মারধর, হেনস্থা, হামলা-মামলাসহ বিভিন্ন দরবারে তদবিরে একক প্রাধান্য বিস্তারে তাদের নেই যেন কোনো জুড়ি।
এ অবস্থায় প্রায় সকলেই তাদের কাছে একধরনের জিম্মীদশায় পড়ে নীরবে চাঁদা দিতে বাধ্য বলে জানায় সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগিরা। যারা এসব নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্বে রয়েছেন, তারাও যেন নীরবে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
এদিকে বাজারে প্রতিনিয়ত যানজটের কারণে অতিষ্ট হয়ে ওঠেছেন সাধারণ মানুষ। নিষিদ্ধ ব্যাটারীচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, সিএনজিসহ যত্রতত্র পার্কিং করে রাখা হয়। অন্যদিকে কাঁচা তরি-তরকারি ও মাছ দোকান ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসানো হয়েছে পুরো বাজারে। সরকার নির্ধারিত তরকারি ও মাছ দোকানের সেড দখল করে সেখানে অবৈধ মাছের আড়ৎ ও চা দোকান ভাড়া দিয়ে রেখেছে প্রভাবশালী ওই চক্রটি।
স্থায়ী দোকান ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা মোটা অংকের টাকা দিয়ে বসার কারণে তাদের কাছে এখন আমরাই অসহায়। প্রভাবশালী ওই চক্রটিকে টাকা দিয়ে বসার কারণে তাদেরকে কিছু বললেই উল্টো আমাদেরকে মারধর করতে আসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব ব্যবসায়ীদের দাবি, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধভাবে বসানো এসব হকার যেন অচিরেই উচ্ছেদ করা হয়।
চন্দ্রগঞ্জ বাজারের এশিয়া ব্যাংক মার্কেটের সামনে ফুটপাতের ব্যবসায়ী ফয়সাল জানায়, তাকে বসানোর জন্য ৪৫ হাজার টাকা নিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল । পরে তাকে উঠিয়ে দিয়ে অন্য আরেকজনকে বসিয়ে তার কাছ থেকে দেড়লাখ টাকা নিয়েছেন তিনি।

মান্দারী বাজার বনিক সমিতির সভাপতি শামসুদ্দীন সাজু জানান খুব তাড়াতাড়ি সকল সমস্যার সমাধান হবে।
চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, বাজার ইজারার শর্ত অনুযায়ী প্রতি হাটে হকার বসবে এবং সরকারের নিয়ম মোতাবেক খাজনা ওঠাবে। কিন্তু এখানে সরকারের কোনো নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে তিনি উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ মাসুম মুঠোফোনে বলেন, চন্দ্রগঞ্জ ও মান্দারী, বাজারে ফুটপাত দখলের বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *