দিগন্তের আলো ডেস্ক
অশীতিপর নরেশ পাল। বয়স শত বছর ছুঁইছুঁই। এখন ঠিকমতো দাড়িয়ে থাকতে পারেন না। তবুও জীবিকার টানে মাটির জিনিসপত্র তৈরী করেন। তা বিক্রি করেই সংসার খরচের কিছু অংশের জোগান দেন। বৈশাখ মাসকে উপলক্ষ্য করে মাটির হাড়ি পাতিল, শিশুদের খেলনাসহ অনেক জিনিসপত্র বানিয়েছেন নরেশ পাল ও তাঁর পরিবার সদস্যরা। করোনা পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠানাদি বন্ধ হওয়ায় তাদের সকল আশা এখন ভেস্তে গেছে। তাই টাঙ্গাইলের এ মৃৎশিল্পীর জিজ্ঞাসা – এখন আমরা কি খেয়ে বাচঁবো?
বৃদ্ধ নরেশ পালের মতো অনেকেই করোনা পরিস্থিতিতে পড়েছেন চরম বিপাকে। খেয়ে না খেয়ে দিনের পর দিন খেটে তারা মাটির তৈরী জিনিসপত্র বানিয়েছেন বৈশাখের বিভিন্ন মেলায় বিক্রি করবেন বলে। পহেলা বৈশাখের দিন থেকে শুরু করে পুরো বৈশাখ মাস জুড়েই থাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা। বিভিন্ন মেলায় ওইসব মাটির জিনিসপত্র বিক্রি করে তারা সারা বছরের লোকসান পুষিয়ে নেবেন, এমন স্বপ্ন ছিল। এখন সবকিছু বিবর্ণ করোনার ছোবলে।
করোনার কারণে টাঙ্গাইলে চলছে লকডাউন। বন্ধ বৈশাখী মেলাসহ সকল ধরনের অনুষ্ঠান। মাটির জিনিসপত্র বিক্রি না হওয়ায় তাই চরম অনিশ্চয়তায় নরেশ পালের পরিবার। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের ব্রাহ্মনকুশিয়া গ্রামে বসবাস নরেশ পালের। সেখানে পালপাড়ায় এরকম অর্ধশত পরিবার মাটির জিনিসপত্র বানিয়ে বিক্রি করতে না পেরে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে আছে। বৈশাখের শুরুতে যেখানে পালপাড়ায় উৎসবের আমেজ থাকে, সেখানে এবার নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া।
বৃদ্ধ নরেশ পাল বলেন,‘বছরের এই মাসই আমাদের বড় সম্বল। এই মাসে মেলায় ঘুরে ঘুরে মাটির জিনিসপত্র বিক্রি করে যে টাকা পাই তা দিয়েই বছরের অর্ধেক চলে। কিন্তু এখন তো সবকিছুই বন্ধ, বাজারে বিক্রি করবো সেটাও নাই। এখন আমরা কি খেয়ে বাচঁবো? সরকার কিছু না করলে আমাদের মরা ছাড়া গতি নাই।’
পুত্রবধূ সন্ধ্যা রানী পাল বলেন,‘শ্বশুর বুড়া মানুষ। মাটির ঘোড়া, পাখি, হাঁস, হরিণ, গরুসহ অনেক কিছুই বানিয়েছিলেন, সুন্দর করে রং করেছিলেন। মেলা বন্ধ থাকায় এখন সবকিছুই ঘরে পড়ে আছে। তিনি সারাদিন ঘরে বসে চোখের পানি ফেলছেন।’