দিগন্তের আলো ডেস্ক : –
দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে দিনাজপুরের বিরামপুরে গ্রামের পাশে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুটি পাশে নেই কোনো রাস্তা, আবার বিশেষ কোনো রাস্তার প্রয়োজনও নেই গ্রামবাসীর। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ একজন ব্যক্তির দুই বিঘা জমির ধান আনা নেওয়ার জন্যই সরকারি টাকা ব্যয়ে এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি চল্লিশ দিনের কর্মসূচির লোক দিয়ে সেতুর পাশে রাস্তা তৈরি করা হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নে ৬ নম্বর জোতবানি গ্রামের পূর্বপাশে ফসলী মাঠে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৯ লাখ ৭ হাজার টাকা। দিনাজপুরের শহরের এক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওই সেতুটি নির্মাণ করেন। আগামী ৩১মার্চ সেতুটির নির্মাণের শেষ সময়।
গত শনিবার সরেজমিনে ওই মাঠে গিয়ে যায়, সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু দুই পাশে সংযোগ সড়কহীন অবস্থায় একাকী দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। জোতবানী গ্রামের পূর্বপাশের মাঠের মধ্যদিয়ে একটি খাঁড়ি (ক্যানাল) শৈলান ও বেনুপুর গ্রাম হয়ে খিয়ারমামুদপুর গ্রামে গেছে। খাঁড়ির উপরের যে অংশে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে তার পশ্চিমপাশের গ্রাম থেকে মাঠে আসার একটি অসম্পূর্ণ সরু রাস্তা থাকলেও পূর্বপাশে কোনো রাস্তা নেই। সেতুর ডানপাশ দিয়ে খাঁড়িটির একটি শাখা মাঠের দক্ষিণ দিকে প্রায় ২শ গজ দূরে গিয়ে শেষ হয়েছে। খাঁড়িটির প্রধান অংশ পূর্বদিকে শৈলান গ্রামে চলে গেছে এবং খাঁড়িটির ডান তীরঘেঁষে রেকর্ডের রাস্তা রয়েছে যেটি শৈলান গ্রামে নবনির্মিত সেতুর সংযোগ রাস্তার সাথে মিশেছে।
এ বিষয়ে কথা হয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে। তারা বলেন, আমরা শুনেছি সেতুর দুই পাশে সড়ক তৈরি হবে। কিন্তু সেই সড়ক কবে হবে এবং কেন হবে তা আমাদের জানা নেই। মাঠে কাজ করা কৃষকরা জানালেন, এ সেতুটি আমাদের কোনো কাজে আসবে না।
সেতুর পূর্বপাশে কাটলা ইউনিয়নের শৈলান গ্রামের কৃষক সুলতান মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, শুধুমাত্র পশ্চিমপাশের জোতবানী গ্রামের আজিজুল হক নামের এক ব্যক্তির দুই বিঘা জমি সেতু সংলগ্ন পূর্বপাশে আছে। আর ওই দুই বিঘার জমির ফসল বাড়িতে সহজভাবে তুলতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করেই সেতুটি তৈরি করা হয়েছে।
মাঠে সেতু নির্মাণের ব্যাপারে কথা হলো জোতবানী গ্রামের কৃষক আজিজুল হকের সাথে। তিনি বলেন, খাঁড়ির পূর্বপাশের মাঠে জোতবানী গ্রামের অনেক কৃষকের জমি রয়েছে। খাঁড়ির উপরে কোনো সেতু না থাকায় জমির ফসল বাড়িতে নিতে অনেক অসুবিধা হয়। কতজন কৃষকের জমি আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারো দরকার না হলে সরকার এখান থেকে সেতুটি তুলে নিয়ে যাক।
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাজ্জাক এ ব্যাপারে কালের কণ্ঠকে বলেন, কাবিখা প্রকল্পের চল্লিশ দিনের কর্মসূচির মাধ্যমে আগামীতে ওই সেতুর দুইপাশে রাস্তা তৈরি করা হবে।
বিরামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. কাওসার আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে উনিশ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেতু হওয়ার আগে ওই স্থানটি পরিদর্শনের সময় এলাকাবাসীর জোরালো দাবির প্রেক্ষিতেই সেখানে সেতুটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেতুটি ইউপি চেয়ারম্যানের সুপারিশে তৈরি হয়নি। উপজেলায় মোট ৫টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় এমপির প্রতিনিধি সুপারিশের পর সেগুলো প্রস্তাব গেছে। সেখানে আমি একক ভাবেও কিছু করতে পারবনা বা কোনো চেয়ারম্যান যদি দেন তাহলেও সেটি এককভাবে হবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, সেতু নির্মাণের জায়গাটি ইউ আকৃতির। আগামীতে দুই ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের জন্য সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। সংযোগের রাস্তা যদি না থাকে পর্বতীতে রাস্তা তৈরি করা হবে।